তিস্তার দু’পাড় ঘিরে মহাপরিকল্পনা : ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে ৫ লাখ মানুষ
বন্যা, নদী ভাঙন ও তিস্তার করাল গ্রাস থেকে রক্ষাসহ লালমনিরহাটে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌসুমি মঙ্গা স্থায়ীভাবে দূরীকরণ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুই বছর ধরে তিস্তা নদী সার্ভে, পরিকল্পনা, ডিজাইন ও অর্থ ব্যয়ের পরিমাণসহ সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন শুধুমাত্র বাস্তবায়নের পথে।
জানা গেছে, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। লালমনিরহাট ও তিস্তা ব্যারেজ (ডালিয়া) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীগণের দপ্তরের সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্রপীড়িত জেলা লালমনিরহাটকে কয়েক বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে এ মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর দুপাড় পর্যটন এলাকার রূপ নিবে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বার্ডের প্রকৌশলীগণ। এছাড়াও তিস্তার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে জেলার অন্তত ৫ লাখ মানুষ। ফিরে পাবে তাদের চিরচেনা বসতভিটে।
যুগ যুগ ধরে নদী খনন না করায় তিস্তা নদীর তলদেশে পলি ও বালু জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উজানের পাহাড়ি ঢল ও সামান্য বৃষ্টিতে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে নদীর দুকুল উপচে বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সব কিছু হারিয়ে অসহায় জীবন জীবন করতে হয় এখানকার লাখ লাখ মানুষকে। প্রতি বছর তিস্তার করাল গ্রাস এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করে ফেলেছে। এসব অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকার মহাপকিল্পনার আওতায় তিস্তা নদীর দু’পাড়ে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নদী খনন করে গভীরতা বৃদ্ধিসহ তিস্তার দু’পাড়ে গড়ে তোলা হবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট। সরকারের এ সুদূর প্রসারী পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে তিস্তার পাড়ের দৃশ্যপট। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, ঘুচবে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ অসহায় মানুষ।
তিস্তা ব্যারেজ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর ড্রেজিং ও শক্ত বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রতি বছর কচুরিপানার মতো এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বাসা বাঁধলেও কোনটাই স্থায়ী নয় তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষের। চোখের সামনে নদী গিলে খাচ্ছে তাদের বসতভিটে, ফসলি জমি ও স্থাপনা। ফলে ফসলহানিসহ দিন দিন চরম অর্থ কষ্টে পড়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। অনেকেই রাস্তার পাশে বাঁধের ধারে আশ্রয় নিয়ে অসহায় জীবন করছেন।
তিস্তা নদী এখন জেলার জন্য অভিশাপে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে ভারত অতিরিক্ত পানি প্রত্যাহার করায় তিস্তা নদীর পানির তোড়ে জেলাবাসী দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়ে। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। আবার শুষ্কমৌসুমে ভারত সরকার পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তিস্তা ব্যারেজের রিজার্ভারে পানি সংরক্ষণ করে সেচ ব্যবস্থা চালু রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে তিস্তা নদী শুকিয়ে যায়। তিস্তা পরিণত হয় মরুভূমিতে। ফলে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে অত্যন্ত অসহায় জীবনযাপন করেন তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ। নেমে আসে দারিদ্রতা। তিস্তা পাড়ে গৃহহীন মানুষ ঝুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে। অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয় তাদের। ঘরে ঘরে দেখা দেয় অভাব।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ জেলা একদিন শিক্ষা ও সম্পদে সমৃদ্ধশালী হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, চায়না পাওয়ার কোম্পানি দুই বছর ধরে তিস্তা পাড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাপরিকল্পনায় নির্মাণকৃত প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করেছে। তারা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরেছে। পৃথক প্রজেক্ট আকারে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজ বাস্তবায়ন করবে। খুব শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুর হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে এই জেলার বর্তমান চিত্র রাতারাতি পাল্টে যাবে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বাহার মিয়া (৭০) বলেন, ‘বাহে শুনবা নাগছি (শুনতেছি) প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা হামাগগুলাক বন্যা ও নদী ভাঙা থাকি অক্ষা (রক্ষা) করতে মেলাগুলা কাম করবে। শুনিয়া হামরা খুশি হচি বাহে। আর ত্রাণ চাই না বাহে, চাই, তিস্তার বাঁধ।’
এসএস
মন্তব্য করুন